মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেক্স : পহেলা বৈশাখে সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলেসহ ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আজ বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এ প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। এ সময় আরো ডজনেরও বেশি লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার শাহ্বাজপুর এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে মা-ছেলে নিহত হন। নিহতরা হলেন সদর উপজেলার সুহিলপুর হারুন অর রশিদ কলেজের লাইব্রেরিয়ান নাসরিন আক্তার (৩৫) ও তার ছেলে রিয়াদ (১০)। এ দুর্ঘটনায় শফিকুল ইসলাম (৪৮) ও মাহিন মিয়া (২৫) নামে আরও দু’জন আহত হন। এ বিষয়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর সিদ্দিক জানান, দুপুরে হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে ছেড়ে আসা দিগন্ত পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার শাহ্বাজপুর ব্রীজের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা অপর একটি যাত্রীবাহী সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সিএনজি অটোরিকশার যাত্রী নাসরিন আক্তার মারা যান। এ ঘটনায় আহত হন তার ছেলেসহ আরও তিন যাত্রী। তাদেরকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে রিয়াদের মৃত্যু হয়। বাসটি আটক করা হয়েছে। চালক পালিয়ে গেছেন, বলেন ওসি আলমগীর।
এদিকে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে গাজীপুরের কালিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু সৌরভ হোসেন (২৫) নিমন হোসেন’র (২০) মৃত্যু হয়েছে। বিকাল ৪টার দিকে কালীগঞ্জ-টঙ্গী-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কের মনসুরপুর এলাকায় উত্তরা ফিলিং স্টেশনের পাশে এ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সৌরভ গাজীপুর সদর উপজেলার মাধববাড়ী এলাকার সোলেমান হোসেনের ছেলে ও নিমন স্থানীয় উত্তর ছায়াবীথী এলাকার শাকিল মিয়ার ছেলে। এদের মধ্যে সৌরভ গাজীপুরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র।
কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আজিজুর রহমান জানান, গাজীপুর সদর থেকে দু’টি মোটরসাইকেল নিয়ে চার বন্ধু ঘুরতে আসে কালীগঞ্জে। বিকেলে মনসুরপুর নামকস্থানে নিমনসহ সৌরভের বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেলটি (ঢাকা মেট্রো ল-১৫-১৩২০) উত্তরা ফিলিং স্টেশনের পার্শ্বের একটি কালভার্টের পিলারের সঙ্গে আঘাত লাগে। এতে মোটরসাইকেলটি ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলে সৌরভ নিহত হয় এবং গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় নিমনকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. আশরাফুল ইসলাম উন্নত চিকিৎসার জন্য নিমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ঢামেকে নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়, জানান এসআই আজিজুর রহমান।
এর আগে দুপুরে টাঙ্গাইলে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত এবং ৯ জন আহত হন। নিহতদের মধ্যে দু’জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের কামুটিয়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে রেজাউল করিম (১৭) ও গোপালপুর উপজেলার নবগ্রাম এলাকার শরাফত আলীর ছেলে মানিক মিয়া (১৬)। মানিক নবগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নুরুল ইসলাম জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের করাতিপাড়া এলাকায় ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলগামী একটি কার্ভাডভ্যানের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে কাভার্ডভ্যানের চালকসহ ৪জন আহত হয়। আহতদের ফায়ার সার্ভিস’র কর্মিরা উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
বাসাইল-টাঙ্গাইল সড়কের নথখোলা এলাকায় অপর এক সড়ক দুর্ঘটনায় মানিক নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়। মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গোপালপুর উপজেলার নবগ্রাম এলাকার আল-আমিন (১৫), ছোটন (১৬), কামরুল হাসান (১৫) ও শাকিল আহম্মেদ নামে আরও চারজন আহত হন। তাদেরকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন জানান, গোপালপুরের নবগ্রাম থেকে কয়েকজন কিশোর একটি পিকআপ ভ্যানে উচ্চ শব্দের যন্ত্র (সাউন্ডবক্স) নিয়ে মধুপুর যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে পিকআপ ভ্যানটি ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়া এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাককে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মানিক নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত ৪ জনকে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পহেলা বৈশাখে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটায় পানিতে ডুবে দুই ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার যুগীপুকুরিয়া গ্রামের চাচাতো ভাই-বোন শরিফুল ইসলামের পুত্র নাঈম হোসেন(৩) ও সাইফুল ইসলামের কন্যা শুভা (৪) এক সাথে খেলা করছিল। একপর্যায়ে তাদেরকে বাড়িতে না দেখতে পেয়ে পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে পানিতে ২ ভাই-বোনের মৃতদেহ ভেসে থাকতে দেখা যায়। এলাকাবাসী তাদেরকে উদ্ধার করে জানতে পারে তারা উভয়ই আপন চাচাতো ভাই-বোন। এ ব্যাপারে পাটকেলঘাটা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।